গত আগস্টে ঘুরে এলাম অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বিভিন্ন জীব জন্তুতে ভরপুর লাউয়াছড়া ইকোপার্ক। প্রথমবারের মতো এ সফরে ছবি তুলেছি কম-চোখ ও মনের ক্যামেরায় গেঁথেছি বেশি। আর বুক ভরে নিয়েছি নিঃশ্বাস। অক্সিজেন ও নির্মল বাতাসে ভরপুর লাউয়াছড়াতে সময় কাটানো যেকোন ভ্রমনপিয়াসী থেকে শুরু করে যে কারো জন্য সুন্দর অভিজ্ঞতা হতে বাধ্য।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জন্য এটি আরো কয়েকটি কারণে বেশ উপভোগ্য ছিল। লাউয়াছড়ার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পাশাপাশি আমাদের পূর্বপরিকল্পনাতে ছিল বনের বেশ ভেতরে বসবাস করা খাসিয়া কমিউনিটির সঙ্গে সাক্ষাত করা।
পরিকল্পনা মতো আমরা লাউয়াছড়াতে গেলাম। প্রবেশদ্বারে টিকেট কেটে যাত্রা শুরু করলাম। আমাদের গন্তব্য ছিল প্রায় ৩০ মিনিটের হাঁটার দূরত্বে অবস্থিত খাসিয়া পল্লী যেখানে প্রায় বিশ ঘর খাসিয়ার বাস। আমরা ওখানকার খাসিয়াপুঞ্জি স্কুলে খাসিয়া শিশুদের সঙ্গে সময় কাটাতে চাচ্ছিলাম। তাদের জন্য তিন প্রকারের শুকনো খাবার নিয়ে গিয়েছিলাম।
সকলে মিলে কেক ও সিঙ্গারা খাচ্ছি
আমরা বেলা তিনটার দিকে খাসিয়া পল্লীতে পৌঁছেছিলাম। সেখানে পৌছানোর পর স্থানীয় খাসিয়া যুবক সাজুর মাধ্যমে জানতে পারলাম স্কুল ততক্ষণে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তবে যেহেতু বাড়িগুলো ২০০/৩০০ মিটার দূরত্বে অবস্থিত তাই ১০/১৫ মিনিটের মধ্যে স্কুলের প্রায় ২২ জন শিক্ষার্থীকে একত্রিত করা গেলো।
হাস্যোজ্জল এতগুলো মুখকে একসাথে দেখতে পেরে ৫ কিলোমিটার হাঁটার ক্লান্তি নিমিষেই উবে গেলে! অবশ্য উদ্যানের মধ্য দিয়ে হাঁটায় তেমন কষ্ট হয়নি, বরং বেশ ঘাম ঝড়িয়ে নিয়েছি এবং বিশুদ্ধ অক্সিজেন গ্রহণ করেছি।
খাসিয়াদের বাড়ি
যাওয়ার পথে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও নানা পাখির গান যেমন মুগ্ধ করেছে তেমনি মানুষের কিছু অবিবেচক আচরন ক্ষুব্ধ করেছে। ভেতরে কিছুটা ঢুকেই দেখতে পেলাম বনের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা রেললাইন। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত এই রেললাইনটা কি বাতিল করা গেলো না?
বাড়ির আঙ্গিনায় ফুলের বাগান
বিভিন্ন প্রাণীতে ভরপুর এ বনের মধ্য দিয়ে যখনই ভয়ানক শব্দ করে কোন ট্রেন যায় তা বন্যপ্রাণীদের জন্য কতটা বিরক্তিকর হতে পারে তা অনুধাবন করা কী এতটাই কঠিন?
অবিবেচক দর্শনার্থীদের কথা কী বলবো! পথে দেখলাম পরে রয়েছে চিপসের প্যাকেট, পানীয়ের প্লাস্টিক বোতলসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর সামগ্রী। একটি মোড়ে দেখলাম বেশ জোরেসোড়ে গান গাচ্ছে একদল তরুন। দেখে বুঝাই যাচ্ছিল তারা কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র। প্রায় ৭/৮ জন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ দলবেধে একের পর এক গান গেয়ে যাচ্ছেন। বন্যপ্রাণীর নিরাপদ এ আশ্রয়ে যে জোরে শব্দ করা বা গান গাওয়া শোভনীয় নয় এ সাধারণ বিষয়টি কখন বুঝবো আমরা?
এরকম বিরক্তিকর কিছু দৃশ্য পেরিয়ে প্রায় আঁধা ঘন্টার হন্টন পরিক্রমা শেষে অবশেষে গিয়ে পৌছলাম খাসিয়াপুঞ্জিতে। প্রায় গোটা পনের ঘর নিয়ে ওই খাসিয়া পুঞ্জিটি। সেখানকার বাচ্চাদেরকে নিয়েই ওই স্কুলটি যার উদ্দেশ্যে শুরু হয়েছিল আমাদের যাত্রা।
https://www.facebook.com/sabidin.ibrahim/videos/421484448381307/
আমরা আসার পথে বাচ্চাদের জন্য কিছু খাবার নিয়ে এসেছিলাম। কিছু সিঙ্গারা, কেক ও প্রত্যেকের জন্য এক প্যাকেট করে বিস্কুট।
একটি খাসিয়া শিশুর পারফর্মেন্স
সেখানে পৌছার ১০ মিনিটের মধ্যেই সকল বাচ্চারা একে একে জমা হয়ে গেল। যেহেতু ঘরগুলো কাছাকাছি তাই স্কুলের দুয়েকজন বাচ্চা নিজেরা ভলান্টিয়ারিং করে সকলকে নিয়ে আসে ভরদুপুরে। অবশ্য দুপুর পেরিয়ে তখন বেলা সাড়ে তিনটা চলছিল।
সিএনজি চালক ও আমাদের গাইড রাজন ভাইয়ের সেলফিতে আমরা সবাই
খাসিয়াপল্লীর বাচ্চাদের সঙ্গ ছিল আমাদের জন্য অনন্য এক অভিজ্ঞতা। তাদের সঙ্গে কথা বলা থেকে শুরু করে তাদের কথা শুনা ছিল বেশ উপভোগ্য। ভাষা নিয়ে বেশ সংকটে পড়লেও তারা নিজেরা এগিয়ে এসে একের পর এক সমবেত সংগীত, গান ও কবিতা পাঠ করতে থাকে। তাদের সঙ্গে স্মরণীয় একটি বিকেল ছিল আমাদের। একসঙ্গে গান, কবিতা, খাওয়াদাওয়ার স্মৃতিগুলো আজীবন থাকবে বলে দৃঢ়বিশ্বাস। প্রকৃতির সঙ্গে আত্মীয় পেতে বসবাস করা এ জনগোষ্ঠির সঙ্গে মনের অজান্তেই যেন আমরাও আত্মীয় পেতে বসে আছি। এজন্য তাদের কাছ থেকে চলে আসলেও বারবার ফেরার ইচ্ছে জাগছে। খুব শীগগিরই যাবো আমার ওই পরম আত্মীয়দের কাছে-
খাসি বা খাসিয়াদের নিয়ে বিস্তারিত জানতে পড়তে পারেন এই লেখাটি:
http://barciknews.com/archives/4376
The post লাউয়াছড়া ইকো পার্ক ও খাসিয়াপুঞ্জীতে একদিন appeared first on Bangladesh Study Forum.